কবি ইকবাল কাগজীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা এবং...
- আপলোড সময় : ২৭-০৮-২০২৫ ০১:২৮:২৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৭-০৮-২০২৫ ০১:২৮:২৯ পূর্বাহ্ন

পুলিন রায় ::
আমি এক সময় ভাবতাম সুনামগঞ্জ শহরে মাত্র দুজন কবি আছেন। একজন ইকবাল কাগজী অন্যজন মমিনুল মউজদীন। ইকবাল কাগজীর কবিতায় পেতাম পোড়খাওয়া জীবনের পাঁচালি, হাওরমাটির ঘ্রাণ, আফালের ধর্জটি নিনাদ। মমিনুল মউজদীনের কবিতায় জোছনাবিলাসের সাথে মানবিকতা ঝরে পড়তো অবিরল। মনে হতো এই দুই কবি সমগ্র দেশের কবিসমাজের দৃষ্টিতে আছেন সুনামগঞ্জের মতো শান্ত-¯িœগ্ধ ‘ফ্যামিলিটাউন’ খ্যাত মফস্বল শহরে থেকেও। যদিও পরবর্তীতে আমার ভুল ভেঙেছে। সুনামগঞ্জে আরো অনেক মেধাবী ও তেজস্বী এবং খ্যাতনামা কবি-সাহিত্যিক রয়েছেন।
মরমী কবি হাছন রাজা, বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্ত, দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, কথাসাহিত্যিক শাহেদ আলী, বাউলস¤্রাট শাহ আব্দুল করিম, মরমী কবি দুর্বিন শাহ, গুণী শিল্পী মো. গিয়াস উদ্দিন ও বাউল ক্বারী আমীর উদ্দিনসহ আরো অসংখ্য মরমী কবি-সাহিত্যিকের স্মৃতিধন্য সুনামগঞ্জ বাংলা সাহিত্যে এক উজ্জ্বল স্থান দখল করে আছে।
বলছিলাম কবি ইকবাল কাগজী ও কবি মমিনুল মউজদীনের কথা। আমার পরম সৌভাগ্য যে, এই দুই গুণী কবির সাথে নিবিড় এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। আমরা মায়াবী এক অমোঘ হৃদ্যতায় আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মউজদীন ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক হয় ১৯৯২ সালে, সিলেটে। প্রথম সাক্ষাতেই তিনি আমার হৃদয়মন জয় করে নেন তাঁর উষ্ণ যাদুময়ী আচরণে। তিনি ভাস্কর-এর কয়েকটি সংখ্যায় লিখেছেনও। একবার তাঁর অফিসে (তিনি তখন সুনামগঞ্জ পৌরসভার স্বনামধন্য চেয়ারম্যান) গিয়েছিলাম। তখন ঘর ভর্তি লোকজন। বসার কোনো আসন নেই। আমি দরজা ঠেলে মুখ দেখাতেই তিনি দাঁড়িয়ে আমাকে অভ্যর্থনা জানান এবং তাঁর পাশের চেয়ারে বসা একজন কেতাদুরস্ত টাইপের লোককে তুলে দিয়ে আমাকে বসান। শুধু তাই নয়। বিশিষ্ট নানা উপাধি দিয়ে আমাকে যেভাবে পরিচিত করিয়ে দিয়েছিলেন তাতে আমি রীতিমতো বিস্মিত ও লজ্জিত বোধ করেছিলাম। এই হলেন কবি মমিনুল মউজদীন। তিনি এখন আর ইহলোকে নেই। ঢাকা থেকে নিজের গাড়িতে করে আসার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বেশ কছর আগে স্ত্রী ও এক সন্তানসহ অকালে প্রাণ হারাণ। তাঁর স্মৃতির প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা।
কবি ইকবাল কাগজী। আমার পরম প্রিয় একজন মানুষ। আগেই বলেছি তাঁর নামের সাথে অনেক আগে থেকেই পরিচয়। কর্মসূত্রে ২০০১ থেকে ২০১০ যখন সপরিবারে ‘সুনামগঞ্জবাসী’ হলাম তখন ইকবাল কাগজী ভাইয়ের সাথে প্রাণের এক সখ্য গড়ে উঠে। তিনি শিক্ষক মানুষ। আমি তাঁর বিভাগেরই এক কর্মকর্তা। প্রথম দিকে আমার সাথে মিশতে একটু সংকোচ বোধ করতেন বলে মনে হয়েছিলো। কিন্তু আমি “আরে ভাই আমার চাকরি হয়েছে সেদিন। কিন্তু আপনার নামের সাথে, কবিতার সাথে পরিচয় অনেক আগেই। আপনি কবি, আসেন তো আড্ডা মারি...।” বলে তাঁকে যখন জড়িয়ে ধরি তখনই ভেঙে যায় আমাদের মিলনের সব আগল। একজন কবি ইকবাল কাগজীর সাথে কবিতাবিষয়ক আড্ডার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। ফাঁক পেলেই বন্ধের দিন বা সন্ধ্যার পর কোথাও চলতো জ¤েপশ বৈঠক।
আমি ১০ বছরাধিক সুনামগঞ্জে থাকাকালে সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠ (সুনামকণ্ঠ এখন দৈনিক)-এর সম্মানিত স¤পাদক শ্রদ্ধেয় বিজন সেন রায়ের কল্যাণে এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক দৈনিক অবজারভার-এর সুনাগঞ্জ প্রতিনিধি প্রয়াত প্রিয় শাহার উদ্দিন ভাইয়ের কলকাঠিতে আমি অভাজনকে ‘সুনামকণ্ঠ সাহিত্য পরিষদ’-এর সভাপতি মনোনীত করা হয়। আমার পরিচালনায় ‘সুনামকণ্ঠ’-এ প্রথমবারের মতো চালু হয় ‘কণ্ঠসাহিত্য’ নামে সাহিত্য পাতা। সুনামকণ্ঠ হয়ে যায় যেন আমারও অফিস। পাতাটি দারুণ জনপ্রিয় হয়। তখনই আরো অনেকের সাথে গভীর সম্পর্ক হয়ে যায়। অনেক প্রিয় নাম বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। তবে এখন নয়। লিখবো অন্য কোনোদিন, অন্য কোথাও। প্রখর ব্যক্তিত্ব স¤পন্ন, মেধাবী পড়–য়া এবং কবিতাঅন্ত প্রাণ, কবিতার এক মেধাবী ‘চাষী’ কবি ইকবাল কাগজীর সাথে মিশতে পেরে, তাঁর সাথে গভীর সখ্য তৈরি হওয়াতে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করছি। এই কবির সত্তরতম জন্মদিনে অফুরান শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই। প্রার্থনা করি তাঁর সুস্থ দীর্ঘজীবন।
সুনামগঞ্জকে আমরা জলজোছনা মাখা কবিতাশহর মনে করি। এই শহরের সতীর্থ কবি-সাহিত্যিক-সুধিসমাজ নিয়ে গঠিত ‘বিষ্যুদবারের বৈঠক’ আয়োজন করেছে ‘কবিতার শব্দে-পঙক্তিতে শতফুল ফুটিয়ে তুলুন হে কবি’ শীর্ষক কবি ইকবাল কাগজীর ৭০ তম জন্মদিন ঘিরে অনুষ্ঠান। আয়োজন সফল হোক। আয়োজকদের ধন্যবাদ। শুভ জন্মদিন, প্রিয় কবি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ